More

    শ্রীলঙ্কার ষোলোসমাস্তানা: ১৬টি পবিত্র বৌদ্ধ তীর্থস্থান স্থাপত্যকলার উজ্জ্বল নিদর্শন

    Published on:

    শ্রীলঙ্কা, একটি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এই দ্বীপরাষ্ট্রের বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবের ফলে অসংখ্য পবিত্র তীর্থস্থান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি স্থানকে ‘ষোলোসমাস্তানা’ (Solosmasthana) বলা হয়, যা শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র এবং শ্রদ্ধার স্থান। প্রাচীন বৌদ্ধ সাহিত্য এবং ঐতিহাসিক নথিপত্র অনুসারে, এই ষোলোটি স্থান পবিত্র কারণ সেগুলোতে গৌতম বুদ্ধ নিজে কখনো না কখনো উপস্থিত ছিলেন অথবা তাদের সঙ্গে কোনো ঐতিহাসিক বা ধর্মীয় ঘটনা জড়িত।

    এই ১৬টি পবিত্র স্থান শুধুমাত্র ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এগুলো শ্রীলঙ্কার প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যকলার উজ্জ্বল নিদর্শনও বহন করে। শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ ভক্তদের জন্য এই তীর্থস্থানগুলি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ।

    এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো শ্রীলঙ্কার সেই ১৬টি পবিত্র তীর্থস্থান—’ষোলোসমাস্তানা’ সম্পর্কে, তাদের ইতিহাস, ধর্মীয় গুরুত্ব, এবং প্রতিটি স্থানের বিশেষত্ব।

    ১. মহিয়াঙ্গনা (Mihintale)

    মহিয়াঙ্গনা শ্রীলঙ্কার অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধ তীর্থস্থান। এটি ছিল প্রথম স্থান যেখানে বুদ্ধের পদচারণা ঘটেছিল। ইতিহাস অনুসারে, গৌতম বুদ্ধ তার প্রথম সফরের সময় এখানকার নাগাদের রাজার সাথে দেখা করেন এবং তাদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করেন। এই ঘটনা শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার শুরুর ইঙ্গিত দেয়। বর্তমানে মহিয়াঙ্গনা একটি বিখ্যাত তীর্থস্থান এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।

    ২. কেলানিয়া রাজমহা বিহার (Kelaniya Raja Maha Viharaya)

    কেলানিয়া রাজমহা বিহার কলম্বো থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দির। এটি বিশ্বাস করা হয় যে বুদ্ধ তার তৃতীয় সফরের সময় এখানে আগমন করেন এবং ধর্ম প্রচার করেন। এটি শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এবং প্রতিবার দুর্গাপূজার সময় প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।

    ৩. অনুরাধাপুরার শ্রী মহা বোধি (Sri Maha Bodhi, Anuradhapura)

    শ্রী মহা বোধি শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে পবিত্র স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি বোধি গাছের একটি শাখা যা বুদ্ধির প্রাপ্তির পর বুদ্ধের নিচে বসে থাকা আসল বোধি গাছের একটি অংশ। এই পবিত্র গাছটিকে কেন্দ্র করে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ধর্মীয় ইতিহাস গড়ে উঠেছে এবং হাজার হাজার বৌদ্ধ ভক্ত এখানে পূজা অর্চনা করতে আসেন।

    ৪. রুবনওয়েলিসায়া (Ruwanwelisaya)

    রুবনওয়েলিসায়া অনুরাধাপুরায় অবস্থিত একটি বিশাল বৌদ্ধ স্তূপ, যা দ্বিতীয় শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিল। এই স্তূপটি মহাসেনা রাজা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এটি বৌদ্ধ স্থাপত্যের এক অসাধারণ উদাহরণ। রুবনওয়েলিসায়ায় বুদ্ধের কিছু ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষিত আছে, যা এটিকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান করে তুলেছে।

    ৫. লঙ্কারামায়া (Lankarama)

    লঙ্কারামায়া শ্রীলঙ্কার অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ। অনুরাধাপুরায় অবস্থিত এই স্তূপটি তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মিত হয় এবং এটি শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ স্থাপত্যের প্রাচীন নিদর্শনগুলির একটি। লঙ্কারামায়ার ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক, কারণ এটি বুদ্ধের উপস্থিতি বা তাদের নির্দেশের অধীনে গড়ে উঠেছে।

    ৬. থুপারামায়া (Thuparamaya)

    থুপারামায়া শ্রীলঙ্কার প্রাচীনতম স্তূপগুলির মধ্যে একটি এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রথম নিদর্শনগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি রাজা দেভানামপিয়া তিস্সা কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল এবং এখানে বুদ্ধের বক্ষাস্থির হাড় সংরক্ষিত আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। থুপারামায়া বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র স্থান।

    ৭. সেগিরিয়া (Sigiriya)

    সেগিরিয়া শ্রীলঙ্কার অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থান। এটি একটি প্রাকৃতিক পাথরের গঠন যা প্রাচীনকালে একটি রাজকীয় দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হত। সেগিরিয়া শুধুমাত্র তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং এটি একটি বৌদ্ধ মঠ হিসেবেও বিখ্যাত। পবিত্র স্থান হিসেবে সেগিরিয়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়।

    ৮. ডিগাওয়াপিয় (Dighavapi)

    ডিগাওয়াপিয় শ্রীলঙ্কার পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি পবিত্র বৌদ্ধ তীর্থস্থান। এটি বিশ্বাস করা হয় যে বুদ্ধ তার তৃতীয় সফরের সময় এখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। ডিগাওয়াপিয় স্থানে বুদ্ধের পদচিহ্ন রয়েছে এবং এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।

    ৯. তিরিয়ায়া (Tiriyaya)

    তিরিয়ায়া শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির। এখানে বুদ্ধের ধ্যানের সময়কালকে স্মরণ করে স্তূপ নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি বৌদ্ধ ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়ের স্মারক এবং আজও ভক্তদের জন্য অন্যতম প্রিয় তীর্থস্থান।

    ১০. গিরিহান্দু শিলা (Girihandu Seya)

    গিরিহান্দু শিলা শ্রীলঙ্কার প্রথম স্তূপ হিসেবে পরিচিত। এটি বুদ্ধের দুই বণিক শিষ্যের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের শুরুর দিকের নিদর্শন হিসেবে গিরিহান্দু শিলা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

    ১১. আবাদাগিরি স্তূপ (Abhayagiri Stupa)

    আবাদাগিরি স্তূপ শ্রীলঙ্কার অন্যতম বৃহত্তম বৌদ্ধ স্তূপ। এটি রাজা বাটিকাভায়া কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল এবং এটি শ্রীলঙ্কার প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম চমৎকার উদাহরণ। বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান।

    ১২. সঙ্গমিত্তা থেরি স্মারক (Sanghamitta Vihara)

    সঙ্গমিত্তা থেরি স্মারক শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি তীর্থস্থান। সঙ্গমিত্তা থেরি যিনি মহিন্দ থেরের বোন এবং শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীদের প্রতিষ্ঠাতা, তাকে স্মরণ করে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে।

    ১৩. অলোহা স্তূপ (Aloharama)

    অলোহা স্তূপ অনুরাধাপুরার অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন যা বুদ্ধের শিষ্যদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এটি বৌদ্ধ স্থাপত্য ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক বিশেষ উদাহরণ।

    ১৪. কিরিভেহেরা (Kirivehera)

    কিরিভেহেরা শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি বিশাল বৌদ্ধ স্তূপ। এটি রোহন রাজ্যের রাজা কিরিতিবাসা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত।

    ১৫. গলবাড়া (Galaboda Temple)

    গলবাড়া একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির যা শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের অংশ। এটি প্রাচীন রাজাদের দ্বারা নির্মিত এবং বৌদ্ধ ভক্তদের জন্য একটি পবিত্র স্থান।

    ১৬. পুন্নাওয়েলা (Punnawala)

    পুন্নাওয়েলা শ্রীলঙ্কার একটি ঐতিহাসিক তীর্থস্থান।

    Related

    Leave a Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here